শীতের শুরুতে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ বেড়ে গেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে বায়ুদূষণ রোধে পানি ছিটানোসহ যেসব কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল সেগুলো আর চোখে পড়ে না। চলতি বছরের শুরুতে হাইকোর্ট রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দেন। নির্দেশনার আলোকে সিটি করপোরেশন থেকে পানি ছিটানো, বর্জ্য অপসারণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে করোনাভাইরাসের কারণে বায়ু দূষণবন্ধের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে বায়ুদূষণ রোধের কার্যক্রম আবার যাতে শুরু হয় সেজন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করেছেন রিটকারী আইনজীবীরা। আবেদনে ঢাকার আশপাশের বায়ুদূষণের মারাত্মক অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন করা হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন চাওয়া হয়েছে। আগামীকাল রোববার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে রিটকারী আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে ঢাকায় মারাত্মক বায়ুদূষণ হচ্ছে। আমরা এই প্রতিবেদনগুলো উল্লেখ করে বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টে একটি আবেদন করেছি।
তিনি আরো বলেন, বায়ুদূষণ রোধে আমরা উচ্চ আদালতের ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন চেয়েছি। আদালতের নির্দেশে বায়ুদূষণ রোধে রাজধানীতে পানি ছিটানো, আশপাশের ইটভাটা বন্ধ করাসহ বিভিন্ন পর্যক্ষেপ নেয়া হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এসব কার্যক্রম এখন বন্ধ রয়েছে। এসব কার্যক্রম আবার শুরু করা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, বায়ুদূষণ রোধে আমরা যে আবেদন দাখিল করেছি এ বিষয়ে রোববার শুনানি হতে পারে। গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দেন বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
নির্দেশনাগুলো হলো :
১. ঢাকা শহরের মধ্যে যেসব ট্রাক বা অন্যান্য যানবাহনে বালু বা মাটি পরিবহন করা হয়, সেগুলো কাভার্ড (ঢাকনাযুক্ত) করতে হবে।
২. যেসব জায়গায় নির্মাণকাজ চলে সেসব স্থানে ঠিকাদারদের ঢাকনা দিয়ে নির্মাণকাজ পরিচালনা করতে হবে।
৩. ঢাকার সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর যে নির্দেশ ছিল, সে নির্দেশ অনুযায়ী যেসব জায়গায় এখনো পানি ছিটানো হচ্ছে না, সেসব এলাকায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. সড়কের মেগা প্রজেক্টের নির্মাণকাজ এবং কার্পেটিংয়ের যেসব কাজ চলছে, সেসব কাজ যেন আইন-কানুন এবং চুক্তির শর্ত মেনে করা হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. যেসব গাড়ি কালো ধোঁয়া ছাড়ে সেগুলো জব্দ করতে বলা হয়েছে।
৬. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করতে হবে এবং যেসব গাড়ি পুরনো হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৭. যেসব ইটভাটা লাইসেন্সবিহীনভাবে চলছে, সেগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনো বন্ধ করা হয়নি, সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ।
৮. পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইকিলিং বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৯. মার্কেট এবং দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখতে হবে এবং মার্কেট ও দোকান বন্ধের পরে সিটি করপোরেশনকে ওই বর্জ্য অপসারণ করার নির্দেশ দেয়া হয়।
আইনজীবীরা জানান, ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর হাইকোর্ট কী কারণে রাজধানীর বাতাস দূষিত হচ্ছে এবং বায়ুদূষণ রোধে কী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন সেজন্য একটি নীতিমালা তৈরি করতে পরিবেশ সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সাথে রাজধানীর রাস্তা ও ফূটপাথে ধুলাবালু, ময়লা ও বর্জ্য অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কমিটিতে দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ওয়াসা, ডেসকোসহ সব পরিষেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের একজন করে প্রতিনিধি, প্রয়োজন হলে একজন বিশেষজ্ঞ রাখতে বলা হয়েছিল।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া ঢাকার সব রাস্তা, ফুটপাথ ও ফ্লাইওভারে জমে থাকা ময়লা, ধুলাবালু অপসারণের নির্দেশের পাশাপাশি দিনে কমপক্ষে দুইবার পানি ছিটাতে নির্দেশ দেয়া হয়। রাস্তার পাশে থাকা গাছ ও ভবনের দেয়ালেও পানি ছিটাতে বলা হয়েছিল।
জনস্বার্থে পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) এক সম্পূরক আবেদনের শুনানির পর হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আইনজীবীরা জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি গঠন ও রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ রোধে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কমিটি বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দূষণ রোধের ব্যাপারে সুপারিশ ও নীতিমালা করে কাজ করছিলেন। এখন রাজধানীসহ আশপাশে বায়ুদূষণ হচ্ছে। আর করোনা ভাইরাসের কারণে দূষণ রোধের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাই আবারো এসব কার্যক্রমের বিষয়ে আদালতে শুনানির জন্য উঠছে।